একান্ত ভাবনা

ধরম নীতি, রাজনীতি, অরথনীতি, সমজনীতি ইত্যাদি

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আমার কাজ আমি বন্ধু করিয়া রে যাব …

বাউল
উপরের শিরোনামের কথাগুলো একটি গানের কথা। গানটি পুরোনো দিনের গান আর বাউল সূরে, বাউল ভংগিতে গাওয়া হয়েছে।
যারা গান শোনে তাদের অনেকেই এই গানটা পছন্দ করবে না। আর আজকের দিনের ছেলে মেয়েরা তো করবেই না। তবে আমার কাছে এই গানটা খুব পছন্দের আর প্রিয় কোন গানের মতই এই গানটিও আমি মাঝে মধ্যেই শুনে থাকি।
পুরোনো দিনের বাউল ধরনের গানের প্রতি ভালবাসার জন্য যদি কেউ পুরোনো মানসিকতার লোক বলে আমাকে গালিও দেয় তবু আমি কষ্ট পাব না। আমি বরং বলব এই গানটি আমি ভালবাসি এবং সব সময় বেসে যাব।
সূর-সংগিতের প্রাথমিক জ্ঞানও আমার নেই। গান গাওয়াও আমাকে দিয়ে একেবারেই হয় না। কিন্তু এই গানটির প্রথম দুই/তিন লাইন গুন গুন করে গাই যদিও তা কোন গায়কের মত নয়। গানটি ভাল লাগে, গানটির প্রতি আমি যতেষ্ট দূর্বল এ জন্যই গাই।
বাস্তবে গানটি ভাল লাগার পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে।
প্রথমতঃ গানটি এমন এক প্রেমিকের ছবি তুলে ধরে যে ঘৃনিত ও অবহেলিত হয়েও নিঃস্বার্থ ও শর্তহীনভাবে ভালবাসে। এ এমন এক ছবি যা আমি আমার নিজের মধ্যে খুঁজে পাই।
দ্বিতীয়তঃ দৃঢ়তা। গানটির মধ্যে এমন এক দৃঢ় মন মানসিকতা সম্পন্ন প্রেমিক মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় যে ভালবাসার জন্য বা ভালবাসার মানুষটির জন্য সবকিছু মেনে নিতে পারে, সর্বচ্চো ত্যাগ স্বীকার করতেও সব সময় প্রস্তুত থাকে। এরা অন্য রকমের প্রেমিক। এরা ভালবাসে কিন্তু বিনিময়ে কিছুই চায় না। কোন কিছুর জন্যই কোন অভিযোগ করে না। এরা যাদের ভালবাসে তারাই এদের সবচেয়ে বেশি দুঃখ দেয়। পৃথিবীতে এটি বিরল ভালবাসারও একটি প্রতিচ্ছবি বটে।
তৃতীয়তঃ গানটি আমাকে যীশুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গানটি যখন শুনি তখন যীশুর জীবন, তাঁর বলা কথা, করা কাজ ছবির মত হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে।
বাইবেলের বিভিন্ন পুস্তক বিশেষকরে মথি ১১: ২৭-২৮; মার্ক ৪: ৩৫-৪১; ৬: ৩০-৪৪ এবং যোহন ২: ১-১১; ৫: ১-৯; ১১:৩৮-৪৪; ২০: ৩০-৩১ অংশগুলো ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে যীশুর জীবন, তাঁর কথা, কাজ ইত্যাদির সন্ধান পাওয়া যায় এবং বোঝা যায় তিনিই ছিলেন বিশ্ব প্রেমিক। যারা তাকে ঘৃনা করেছে তিনি তাদেরই ভালবেসেছেন। বিনা দোষে যারা তাঁকে দোষ দিয়েছে, নির্যাতন করেছে তিনি তাদেরই ভালবেসেছেন। যারা ক্ষমার যোগ্য ছিল না তিনি তাদেরকেই ক্ষমা করেছেন।
তাঁর কাছে প্রেম ছাড়া আর কোন কিছুরই কোন গুরুত্ব ছিল না।
তিনি অসুস্থ্যদের সুস্থ্য করেছেন, মৃতদের জীবন দিয়েছেন, অন্ধ, বোবা, খঞ্জদের শক্তি দিয়েছিলেন যেন তারা দেখতে পায়, শুনতে ও চলতে পারে।
তিনি মাত্র পাঁচটা রুটি আর দুই টুকরো মাছ দিয়ে অলৌকিক কাজ করেছিলেন এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি ক্ষুধার্ত মানুষদের খাইয়ে ছিলেন। তিনি যা কিছুই করেছেন মানুষের প্রতি গভীর প্রেম-ভালবাসা থেকেই করেছেন।
মানুষের প্রতি তাঁর যে ভালবাসা শুধু সেই ভালবাসার কারণেই তিনি মানুষের রুপ ধারণ করে পৃথিবীতে এসেছিলেন। প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, সব শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে প্রভূর বাণী বলেছেন যেন তারা মুক্তি পায়, অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়।
আর এসব করতে গিয়ে তিনি কখনোই ভাবেন নি লোকেরা কতটা খারাপভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মন্দ কথা বলছে, সমালোচনা করছে। এমন কি আমরা লক্ষ্য করি ক্রুশীয় মৃত্যুর মুখোমুখী হয়েও তিনি মানুষের সমালোচনা, ঘৃনা, নির্যাতনের কথা ভাবেন নি।
যীশুর এসব কাজ, গুণাবলী বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাব তাঁর পুরো জীবনটাই যেন একটা গান। আর সেই একই সূরে, একই লয়ে, একই তালে যেন বলছে,”আমার কাজ আমি বন্ধু করিয়া রে যাব/ তুমি বাস কি বাস না তা আমি জানি না/ ভাল বাস কি বাস না তাও আমি বুঝি না/ আমি শুধু আমার কাজ করিয়া রে যাব।”
বিশ্বাসীদের জীবনে যীশুর এ ধরনের এক পেশে ভালবাসার গুরুত্ব অনেক। যীশুর এই ভালবাসার কারণেই আজকে আমরা মুক্ত হয়েছি, অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়েছি।
যীশুর সত্যিকার অনুসারী হিসেবে বিশ্বাসীদেরও এই একই কাজ করতে হবে। অর্থাৎ যীশু যা বলেন তা তাদের অবশ্যই করতে হবে।
এসব করতে যেয়ে তাদেরও কষ্ট পেতে হবে, নির্যাতন আসবে, লোকেরা ঘৃনা করবে কিন্তু তবুও তাদের ভালবাসা দেখাতে হবে।
তাদের জীবনের মুল সূর হতে হবে এই গানের মতই “আমার কাজ আমি বন্ধু করিয়া রে যাব …।”
আর বিশ্বাসীরা যদি তা করে তবে তার ফল স্বরুপ-
-লোকেরা ভালবাসার প্রকৃত অর্থ ও বিশ্বাসী জীবনের বৈশিষ্ট্য জানতে পারবে
-প্রভূর বাণী যেভাবে প্রচার হওয়া উচিৎ ঠিক সেভাবে প্রচারিত হবে
-সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে
-শত্রুতা কমে যাবে
-ক্ষমতার স্থলে ভালবাসার শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে
পরিশেষে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা প্রভূর ছায়াতলে আসবে আর প্রভূর ধার্মিকতার রাজ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।